‘নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়৷’ প্রয়োজনে মসজিদ-এর জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে সরকার।
১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছিল, নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়। সেই রায়ে আরো বলা হয়েছিল যে, প্রয়োজনে মসজিদ-এর জমি অধিগ্রহণও করতে পারে সরকার। আজ সেই পুরনো রায়ই বহাল রাখে আদালত।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি অশোক ভূষণ এ বিষয়ে সহমত হয়েছে। কিন্তু বিচারপতি নাজির ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আরও জানায় যে, এ মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হবে না।
উচ্চ আদালতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায় যে, এ রায় অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা (মসজিদের না মন্দিরের সে) সংক্রান্ত মূল মামলার রায়কে প্রভাবিত করবে না।
তবে সচেতন নাগরিকদের মতে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে মন্দির তৈরি হবে নাকি মসজিদ- এই বহু আলোচিত মামলার রায়কে ভীষণভাবে প্রভাবিত করবে শীর্ষ আদালতের দেয়া আজকের রায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া এ রায়ের বিরোধিতা করে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড ইন্ডিয়া। তাদের চাওয়া ছিল, ‘এ মামলা বিচার ও রায় যাতে সাংবিধানিক বেঞ্চে করা হয়। সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডের সে আবেদন শীর্ষ আদালত খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখে।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গ্রন্থাগার মন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ইসলামের সঙ্গে মসজিদ অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। ‘নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়’ বলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ (বৃহস্পতিবার) যে রায় দিয়েছে সে প্রসঙ্গে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওই মন্তব্য করেছেন।
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আরো বলেন, ‘আল্লাহ্ পৃথিবীর মাটি তৈরি করার সময় সর্বপ্রথম খানায়ে কাবা তৈরি করেছেন। পৃথিবীর অস্তিত্বের সূচনায় কাবা ঘর। প্রিয়নবী (সা.) যখন মদীনা শরীফে আসেন সেখানে নিজের হাতে মসজিদে নবী করেছেন। ইসলাম ধর্মের যিনি প্রতিষ্ঠাতা তিনি নিজে হাতে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এখন সুপ্রিম কোর্ট কী বলে দেবে মসজিদ প্রয়োজন আছে না, নেই? সুপ্রিম কোর্টকে ব্যাখ্যা কে দিয়েছে তা আমার জানা নেই। মসজিদ অঙ্গাঙ্গিভাবে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত।’
সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়লে ২৭ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। জুমার নামাজ মসজিদ ছাড়া হয় না। জামাত মসজিদ ছাড়া হয় না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কেন ওই রায় দিয়েছে তা জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা দিতে পারে, সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু মসজিদের প্রয়োজন আছে না নেই এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে ভালো হতো।’
তিনি বলেন, ‘কাবা শরীফে নামাজ পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। লোকে মক্কা নগরে বেড়াতে যায় না। কাবা শরীফের মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। মদীনা শরীফে প্রিয়নবীর (সা.) রওজা জিয়ারত করার পাশাপাশি মসজিদে নববীতে নামাজের জন্য মানুষের হুড়োহুড়ি পড়ে। এখানেই বোঝা দরকার মসজিদের প্রয়োজন আছে, না নেই। মসজিদ ছাড়া মুসলিমের পরিচয় নেই। মসজিদ নিয়েই মুসলিমের পরিচয়।’